বর্তমান সময়ে দেশের অন্যান্য খাতের মতো গণমাধ্যম’এরও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী ও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। হলুদ সাংবাদিকতা নির্মুলসহ সাংবাদিকদের প্রাণের দাবিগুলো নিয়ে কাজ করতে আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমি কিছু বিষয়ে আলোকপাত করছি। আশাকরি, তা সহায়ক হবে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা নিশ্চয়ই একটি সুন্দর দিকনির্দেশনা তুলে ধরে সবাই একমতে পৌঁছাবেন। গণমাধ্যমেও সংস্কার প্রয়োজন এবং করণীয় যা যা গণমাধ্যমের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে ভিক্ষুক, নাপিত, অটোচালক, কসাই, হকার, মুদি দোকানদার, ফল দোকানী, মোটরসাইকেল শোরুমের কর্মচারী, মাদক কারবারী, শিক্ষক, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, জনপ্রতিনিধি, চাকরিজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, আইনজীবীসহ এমন কোনো পেশার মানুষ নেই যারা সাংবাদিকতা পেশায় নাই। এতে করে সাংবাদিকতার মান সমাজের সর্ব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। অবস্থা এমন যে ঘরে ঘরে সাংবাদিক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণে তারা সাংবাদিকতা না করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি উদ্ধার এবং চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এজন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যান্য খাতের মতো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম’এরও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বিগত প্রায় ১৬ বছরে সাংবাদিকতায় ব্যাপক অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। এই লম্বা সময়ে প্রায় সকল পেশার মানুষ সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন। এসব সাংবাদিকদের অনেকেই মূলধারার সাংবাদিকদের সাথে ওঠাবসা করেন না। তারা সংবাদ নিয়ে থাকেন না।
এমনও ঘটেছে- মূলধারার সাংবাদিক সরকারি অফিসে বসে আছেন। তার সামনেই তারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা চেয়ে বসছেন। এক সাংবাদিক আর এক সাংবাদিককে চেনেনও না। কি একটা অরাজকতা চলছে এ খাতে। তারা সকাল হলেই ক্ষ্যাপ মারতে তিন-চারটা মোটরসাইকেলে আট থেকে ১০ জন বেরিয়ে পড়েন। সারাদিনে সরকারি-বেসরকারি এ অফিস সে অফিস, মিল, ফ্যাক্টরি, কল-কারখানা, হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানহ গরীব ও দুঃস্থদের শাড়ী, লুঙ্গি বিতরণের কথা বলে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি করে বেড়ান। দিন শেষে সেই টাকা ভাগ করে নেন। পরদিন আবার একই ঘটনা। এভাবেই তারা সংসার চালান। এসব সাংবাদিকরা ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টিভি চ্যানেলের আইডি কার্ড টাকা দিয়ে কিনে এনে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। আইডি কার্ড ঠিক রাখতে প্রতি মাসে অফিসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসোয়ারাও পাঠান চাঁদাবাজ এসব সাংবাদিকরা। অন্য পেশায় জড়িত থেকেও যারা সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে চলছেন সেসব রোধ করতে হবে।
মানে অন্য পেশার কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। সাংবাদিকরাই শুধু সাংবাদিকতা করবেন। এজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই গণমাধ্যমে সুদিন ফিরবে।
আর তা হচ্ছে: ১। অন্য কোনো পেশার মানুষ (শিক্ষক, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিসহ সকল ধরনের চাকরিজীবী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, আইনজীবীসহ অন্য যে কোনো পেশার মানুষ) সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। মূলত যাদের পেশা সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তারাই সাংবাদিকতা করবেন। এবং সাংবাদিকরাও অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না। সাংবাদিকদের ন্যুনতম স্নাতক সমমান পাশ হতে হবে। ৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা থাকলে এইচএসসি পাশ সমমান গ্রহনযোগ্য। তবে তার নিচে নয়।
২। ক্রোড়পত্র ও সরকারি বিজ্ঞাপন পেলে যেসব বাংলা-ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা ছাপানো হয় ও ফুল সেটআপ হাউজ নেই (বড় অফিস ও পর্যাপ্ত জনবল) এবং গত ৬ মাস প্রতিদিন পত্রিকা ছাপানো হয়নি এমন দৈনিক পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করতে হবে। গত ৬ মাসে যারা নিয়মিত ছাপায়নি এমন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও ত্রৈ-মাসিক পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করতে হবে। এতে করে মূলধারার গণমাধ্যম ভালোভাবে চলতে পারবে ও হলুদ সাংবাদিকতারোধ হবে।
৩। বিভাগীয় শহরে প্রতিনিধির বেতন ন্যুনতম ১৪ হাজার টাকা, জেলা শহরে ১২ হাজার টাকা ও উপজেলা শহরে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব গণমাধ্যম তা দিতে ব্যর্থ হবে সেসব গণমাধ্যমের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। এক মাসের বেশি কোনো কর্মীর বেতন বকেয়া রাখা যাবে না। ঢাকা থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সকলকে উৎসব বোনাস দিতে হবে।
৪। সাংবাদিকরা কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যকরী কমিটিতে বা সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না। এমনকি যে কোনো ধরনের সংগঠন/প্রতিষ্ঠানে কার্যকরী কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
৫। সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হত্যা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন। এজন্য বিশেষ আইন তৈরি করতে হবে। সেই আইন অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।
৬। অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য কয়েকটি নামসহ আবেদন করতে হবে। অনুমতি পাওয়ার আগে নিউজ পোর্টাল চালু করা যাবে না ও কোনো জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা যাবে না। অনুমতি পাওয়ার পর টাকা জমা দেওয়ার সময় (www. … .com / … .net) ওয়েব অ্যাড্রেসসহ নিবন্ধন করতে হবে। ৩ মাসের মধ্যে ফুল সেটআপ হাউজ (বড় অফিস ও পর্যাপ্ত জনবল) তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব অনলাইনের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে তাদেরও আগামী তিন মাসের মধ্যে সকল নিয়ম না মানলে তাহলে নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিতে হবে।
৭। ঢাকায় একটি দৈনিক পত্রিকা (বাংলা ও ইংরেজী) এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালাতে কার্যালয়ে ন্যুনতম কতজন জনবল প্রয়োজন হয় ও তাদের প্রত্যেকের বেতনের একটি মানদণ্ড এবং কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে। ওভারটাইম দিতে হবে।
৮। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আওতায় জেলা ও উপজেলা শাখা দিতে হবে। ভোটাধিকার (নির্বাচন) প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেস ক্লাবের কমিটির মেয়্দা হবে দুই বছর পরপর। পরপর দুইবারের বেশি কেউ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। সাংবাদিক নন এমন কাউকে প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা, সদস্য বা কমিটিতে রাখা যাবে না।
৯। এসব নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা একটি কমিটি বা কমিশনের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। কমিটি বা কমিশনে একজন করে প্রকাশক, সম্পাদক, পিআইবি, প্রেস কাউন্সিল, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব রাখতে হবে। তারা ৬ মাস পরপর প্রত্যেক গণমাধ্যমের অফিস অডিট করবেন ও ব্যাংকে পাঠানো স্যালারিশীট ও স্টেটমেন্ট দেখবেন।
১০। পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট ৯০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ (+ -) নির্ধারণ করতে হবে।
১১। পত্রিকার পাশাপাশি সরকারি বিজ্ঞাপন অনলাইনেও দিতে হবে। আর এসব করার পরই তথ্য অধিদপ্তরকে প্রকৃত সাংবাদিদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে ও তা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠাতে হবে। তবেই দেখা যাবে যে- গণমাধ্যম কমে যাবে, সুবিধাবাদীরা হোঁচট খাবে। সাংবাদিকতা মূল সাংবাদিকদের হাতেই থাকবে। আর এসব করতে হবে একটি কমিটি বা কমিশন গঠনের মাধ্যমে। তখন অনেকে আরও অনেক উপায় বলে দেবেন।
লেখক::রানা পাপুল, সংবাদকর্মী
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।