শ্যামনগর প্রতিনিধি: ট্রলার শ্রমিক পিতা আর দিনমজুর মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সাথী মুন্ডা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারের এ কিশোরী এখন শুধু পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশের প্রতিনিধি। অস্তিত্ব সংকটে থাকা আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হয়েও শ্যামনগর উপুকলের সাথীর হাতে এখন লাল সবুজের পাতাকা। শনিবার বিকালে নেপালের মাটিতে দেশের জন্য লড়বেন পনেরো বছরের এ কিশোরী।
সাথী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনির মহসীন সাহেবের হুলো নামীয় এলাকার প্রদীপ মুন্ডা ও প্রতিমা মুন্ডার মেয়ে। বর্তমানে বিএকএসপিতে ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত এ কিশোরী স্থানীয় বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দু’বছর আগে বিকেএসপিতে পাড়ি জমায়।
সাথীর পিতা প্রদীপ মুন্ডা জানায় জায়গা-জমি না থাকায় মহসীন সাহেব নামীয় এক দানবীরের জায়গায় অপর কয়েকটি মুন্ডা পরিবারের সাথে মিলে তাদের বসবাস। ছেলেটি চতুর্থ শ্রেনীতে লেখাপড়া করে জানিয়ে তিনি বলেন মেয়ের অর্জনে তারা শুধুমাত্র পরিবার না, বরং গোটা মুন্ডা সম্প্রদায় ও এলাকাবাসী দারুন খুশি।
সাথীর মা প্রতিমা মুন্ডা জানায়, অভাবের কারণে তারা স্বামী-স্ত্রী কাজের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন। সে সুযোগে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সাথী স্থানীয় বিজি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলতেন। একপর্যায়ে স্থানীয় প্রশিক্ষক মাসুম বিল্লাহর চোখে পড়লে তিনি সাথীর দায়িত্ব নেন। প্রায় দু’বছর প্রশিক্ষনের পর বিকেএসপিতে সুযোগ মিলে যাওয়ায় তারা রীতিমত বিস্মিত হন। এখন মেয়ে দেশের জার্সি গায়ে চড়িয়ে মাঠে নামবেন জেনে আনন্দে ভাসা হারিয়ে ফেলছেন।
সাথীর প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী মাসুম বিল্লাহ জানান, ২০২৩ সালে সে অনুর্ধ্ব ১৫পর্যায়ে দেশের হয়ে ভারতের সুব্রত কাপে খেলেছে। দেশের হয়ে দ্বিতীয় বারের মত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে সে নেপালে রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার বিকালে সাত(৭) নম্বর জার্সি শরীরে চড়িয়ে সাথী অবহেলিত মুন্ডা সম্প্রদায়ের শুধু নয় বরং গোটা এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে সাথী বিদেশের মাটিতে খেলাকে অভ্যাসে পরিনত করবেন বলেও প্রত্যাশা তার। এদিকে সাথীর জন্য তার পরিবার গোটা দেশবাসীর কাছে দোয়া ও আশির্বাদ প্রার্থনা করেছেন।