মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি:- বেনাপোল স্থলবন্দরে মুরগির ২ লাখ ৩১ হাজার ডিমবোঝাই একটি ট্রাক আটকে রয়েছে। তিনটি রোগ পরীক্ষার কোয়ারেন্টাইন সনদপত্র না থাকায় পচনশীল এই পণ্যের চালান এখন বন্দরে পড়ে আছে।
হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন নামের ঢাকাভিত্তিক এই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমদানি করা ডিমের ওপর সরকার এক সপ্তাহ আগে নতুন করে কোয়ারেন্টাইন সনদ সংযুক্ত করার শর্ত আরোপ করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। আমরা বিষয়টা জানতাম না। কোথা থেকে কোরারেন্টাইন সনদপত্র নিতে হবে তা–ও আমাদের জানানো হয়নি। মঙ্গলবার (২৯অক্টোবার) রাতে ডিমের চালান বেনাপোল স্থলবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর।বুধবার (৩০অক্টোবার) সকালে কোরারেন্টাইন সনদপত্র জমা দিতে বলা হয়। এখন নমুনা পরীক্ষা করে ডিমের চালানটি বন্দর থেকে ছাড় করাতে যে সময় লাগবে, তাতে ডিম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দিনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা মাশুল গুনতে হবে।’
পণ্যের নমুনা পরীক্ষা শেষে সনদপত্র বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছাতে কমপক্ষে পাঁচ দিন সময় লেগে যাবে। পণ্যের চালানটি বন্দরে আটকে থাকার জন্য প্রতিদিন মাশুল গুনতে হবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। এ রকম জটিলতার কারণে ডিম আমদানির আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
বেনাপোল স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে ঢাকার হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি মুরগির ডিম গতকাল বুধবার সকালে এসে পৌঁছেছে। এরপর বেনাপোলের কোয়ারেন্টাইন স্টেশন থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার সময় বাংলাদেশের আইএসও অনুমোদিত কোনো ল্যাবরেটরি থেকে তিনটি রোগ–সংক্রান্ত কোয়ারেন্টাইন সনদপত্র চাওয়া হয়; কিন্তু এই সনদপত্রের বিষয়ে কিছুই জানে না আমদাকারক ও ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দরে কোয়ারেন্টাইন স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শার্শা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার সাহা বলেন, ২২ অক্টোবর কোয়ারেন্টাইন– সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তাতে বলা আছে, ‘ডিম আমদানির ক্ষেত্রে আইএসও সার্টিফায়েড কোনো ল্যাবে তিনটি রোগের পরীক্ষা করাতে হবে। ঢাকার সাভারের সরকারি কিউসি ল্যাব অথবা আইএসও সার্টিফায়েড কোনো বেসরকারি ল্যাব থেকেও পরীক্ষা করা যাবে। নমুনা পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত চার দিন সময় লাগবে। ওই সনদপত্র অথবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ডিমের চালান ছাড়া যাবে না।’
আগে ভারতের কলকাতার অ্যানিম্যাল কোয়ারেন্টাইন অ্যান্ড সার্টিফিকেশন সার্ভিস (ইআর) থেকে দেওয়া সনদপত্র দেখালেই বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিমের চালান ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন নতুন করে কোয়ারেন্টাইন সনদপত্র দেওয়ার শর্ত আরোপ করায় আমদানিকারকেরা হয়রানির শিকার হবেন বলে মনে করেন।
হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশনের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন প্রজ্ঞাপন আরোপ করার পরে কোয়ারেন্টাইন স্টেশন থেকে অন্তত মুঠোফোন বা ই–মেইল করে আমাদের জানানো তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। এখন যদি সনদপত্র ছাড়া চালানটি ছেড়ে না দেয়, তাহলে ভারতে ফেরত পাঠানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিশেষ কোনো সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার জন্য আমদানিতে নতুন শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীরা যাতে ডিম আমদানি করতে না পারেন, সে জন্য নানা রকম শর্ত দেওয়া হচ্ছে।
আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, শুল্কায়নসহ প্রতিটি ডিমের আমদানি মূল্য পড়ছে ৮ টাকা ৪৭ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে পরিবহন, শ্রমিক ও ওয়েস্টেজ (নষ্ট) খরচ। সব মিলিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে ডিমপ্রতি সাড়ে ১০ টাকার মতো খরচ হবে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে তারা প্রতি ডিমে ২০ থেকে ৩০ পয়সা লাভ করতে চায়।
এদিকে দেশের বাজারে ডিম সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে এখনো দাম বাড়তি রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে পৌনে ১০ লাখ ডিম আমদানি হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানই এসব ডিম আমদানি করেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; কিন্তু অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো ডিম আমদানি করেনি।
হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন কলকাতাভিত্তিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শ্রী লক্ষ্মী এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে এই ডিম আমদানি করেছে। তাদের পক্ষে ডিমের চালান খালাসের জন্য কাস্টম হাউসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রাতুল এন্টারপ্রাইজ।