ডেস্ক রিপোর্ট: খুলনা জেলা সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের গা ঘেঁষে গড়া ওঠা কয়রা উপজেলা। যা উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, আয়লা, আম্ফান বুলবুল, ইয়াস, ফনিসহ ছোট খাটো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ উপজেলাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মানুষ অতীতে বেশিভাগই সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল ছিলো। ছোট বড় প্রতিটি বাড়ি ছিলো গোলপাতার ছাউনি। তখন গোলপাতার চাহিদা ছিলো প্রচুর। কালের বিবর্তনে হারাতে বসেতে শুরু হয়েছে গোলপাতার ঘর। সেখানে বেশিভাগই বাড়িতে গড়ে উঠেছে ইট দিয়ে তৈরি পাকা ও আধাপাকা বাড়ি। অনেকে গোলপাতা ব্যবহার বাদ দিয়ে বিকল্প টিন/ছাদ দিয়ে ঘর তৈরি করেছেন। গোলপাতা ঘর এখনও বাদ দেয়নি অনেক পরিবার। আগের মতো গোলপাতার চাহিদা নেই। কমে গেছে বাওয়ালীর সংখ্যা। এতে বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের পেশাজীবী মহাজনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘরের চালে গোলপাতা ব্যবহার করলে গরমের সময় ঠান্ডা থাকে ও শীতের সময় গরম লাগে। গোলপাতার ছাউনিকে গরীবের এসি বলে। কমমূল্যে গোলপাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি করা যায়। কালের বিবর্তনে অধিকাংশ বাওয়ালী পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেকে পরিবার গোলপাতার ছাউনি বাদ দিয়ে টিন/ঢেউটিন ও ব্রিন্ডিং দিয়ে সাদ তৈরি করছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে গোলপাতার ঘর।
পাইকগাছা ইসলামি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার মো: রবিউল ইসলাম বলেন, আমার আগে গোলপাতার ছাউনির ঘর ছিলো। বছর ৫ আগে ঘরের চালে টিন দিয়েছি। গোলপাতার ঘর প্রতিবছর ঠিক করা লাগে কিন্তু গরম ও শীতকালে প্রচুর আরাম আছে। টিন দিয়ে একবার ছাউনি করলে কয়েকবছর ঠিক করা লাগে না।
খেওনা গ্রামের এসএম আব্দুল মান্নান বলেন, আমি বাওয়ালী পরিবারের সন্তান। আমি এখনও গোলপাতার ঘরে থাকি। গোলপাতার ঘরে গরম ও শীতকালে আরাম আছে।
ঘুগরাকাটী গ্রামের মো: মিজানুর রহমান বলেন, আমার ঘরের দেওয়াল পাকা কিন্তু ছাউনি গোলপাতা দিয়েছি। গোলপাতার ঘরে শীত ও গরমকালে আরাম রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গরম কালে টিনের তাপে ঘরে মাথা দেওয়া যায় না। শীতের সময় টিনের নাটের (স্ক্রু) গোড়া দিয়ে পানি পড়ে।
আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো: হাসানুর রহমান বলেন, আমরা আগে গোলপাতার ঘর ব্যাবহার করতাম। কিন্তু বিন্ডিং দিয়ে টিনশেড করেছি। গোলপাতা ঘর প্রতিবছর ঠিক করা লাগে। একবার টিন দিলে কয়েকবছর ঠিক করা লাগে না। একই কথা বলেন কুশোডাংগা গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ শফিক।
সুন্দরবনের বাওয়ালী মো: হারুনুর রশীদ বলেন, আমি প্রতিবছর সুন্দরবনে গোলপাতা কাটার জন্য যেতাম। কিন্তু এবছর আর যায়নি একটা মোটরসাইকেল কিনে ভাড়া চালাচ্ছি। বাওয়ালি পেশার যা বেতন পায় তাতে সংসার চলেনা। বিকল্প পেশা হিসেবে গাড়ি ভাড়া চালানো বেছে নিয়েছি।